বৈদ্যুতিক পাওয়ার ট্রান্সমিশনে উচ্চ ভোল্টেজ ডিসি, উচ্চ ভোল্টেজ এসি ব্যবস্থার তুলনায় অনেক দিক দিয়েই সুবিধাজনক। আজ আমরা দেখব এসি ট্রান্সমিশনের সুবিধা ও অসুবিধা, ডিসি ট্রান্সমিশনের সুবিধা ও অসুবিধা অর্থাৎ এসি ও ডিসি ইকোনোমিক ট্রান্সমিশনের তুলনা। এখানে উভয় ব্যবস্থার ট্রান্সমিশনের তুলনামূলক আলোচনা উপস্থাপিত হলো-
ডিসি ট্রান্সমিশনের সুবিধা (Advantage of DC Transmission Bangla)
নিচে ১০টি ডিসি ট্রান্সমিশনের সুবিধা তুলে ধরা হল।
(ক) বৈদ্যুতিক পাওয়ার ট্রান্সমিশনে এসি ব্যবস্থায় যেখানে তিন তার প্রয়োজন, ডিসিতে সেক্ষেত্রে লাগে দুই তার। আর্থকে ফেরত পথ (নিউট্রাল) হিসাবে ব্যবহার করে মাত্র এক পরিবাহীতেও পাওয়ার ট্রান্সমিশন করা সম্ভব। ফলে ডিসি ট্রান্সমিশনে তামার সাশ্রয় হয়।
(খ) ডিসি ট্রান্সমিশনে ইন্ডাকট্যান্স, ক্যাপাসিট্যান্স, পাওয়ার ফ্যাক্টর এবং সার্বজনিত কোনো সমস্যা নেই
(গ) ভিসিতে কোনো স্কিন ইফেক্ট নেই, ফলে লাইন পরিবাহীর সম্পূর্ণ প্রস্থচ্ছেদ ব্যবহৃত হয়।
(ঘ) একই কার্যকরী ভোল্টেজ়ে ডিসি সিস্টেমে ইনসুলেশন এর উপর বৈদ্যুতিক চাপ এসির তুলনায় 1/√2 গুণ। ফলে একই কার্যকরী ভোল্টেজে ডিসিতে কম ইনসুলেশন দরকার।
(ঙ) চার্জিং কারেন্ট, যা নো লোড অবস্থাতেও লাইনে অপচয় ঘটায় ডিসিতে সেটি অনুপস্থিত।
(চ) ডিসি লাইনে করোনা লস (Corona loss) কম।
(ছ) ডিসি ট্রান্সমিশনে পার্শ্ববর্তী কমিউনিকেশন লাইনে এসির তুলনায় কম বিঘ্ন (Interference) সৃষ্টি হয়।
(জ) ডিসিতে ইনসুলেশনের উপর বৈদ্যুতিক চাপ কম এবং ডাই-ইলেকট্রিক লস নগণ্য বলে উচ্চ ভোল্টেজ ট্রান্সমিশনে ভূনিম্নস্থ ক্যাবল ব্যবহার করা যায়।
(ঝ) সমপরিমাণ লোড এবং প্রেরণ প্রান্তের একই ভোল্টেজে এসির তুলনায় ডিসি ট্রান্সমিশন লাইনের ভোল্টেজ রেগুলেশন উন্নত।
(ঞ) ডিসিতে দীর্ঘ ট্রান্সমিশনেও কোনো স্ট্যাবিলাইজার-এর প্রয়োজন পড়ে না।
আরও পড়ুন: মিডিয়াম ট্রান্সমিশন লাইনের ধ্রুবকগুলো কি এবং এর প্রভাবসমূহ?
ডিসি ট্রান্সমিশনের অসুবিধা (Disadvantage of DC Transmission Bangla)
(ক) কমুটেশন সমস্যার জন্য ডিসিতে উচ্চ ভোল্টেজ উৎপাদন করা যায় না এবং
(খ) ট্রান্সমিশনের জন্য ডি.সিতে সরাসরি ভোল্টেজকে স্টেপ-আপ করা যায় না।
(গ) ডি.সি সার্কিট ব্রেকার ও সুইচের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
(ঘ) ডিসি ট্রান্সমিশন তুলনামূলক জুটিল এবং ব্যয়বহুল।
এসি ট্রান্সমিশনের সুবিধা (Advantage of AC Transmission Bangla)
নিচে ৩টি এসি ট্রান্সমিশনের সুবিধা তুলে ধরা হল।
(ক) এসি সিস্টেমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এসিতে উৎপাদন প্রান্ত বা প্রেরণ প্রান্তে স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার ব্যবহার করে সহজেই উচ্চ দক্ষতায় ভোল্টেজকে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অনুযায়ী উচ্চ মানে স্টেপ আপ করা যায় এবং বিতরণ প্রান্তে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার ব্যবহার করে ভোল্টেজকে স্টেপ ডাউন করা যায়।
(খ) এসি সিস্টেমের দ্বিতীয় সুবিধা হলো বৈদ্যুতিক পাওয়ার সহজেই উচ্চ ভোল্টেজে উৎপাদন (জেনারেট) করা যায়।
(গ) এসি সিস্টেমে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের (Substation) সংরক্ষণ খুবই সহজ ও সস্তা।
আরও পড়ুন: সুইচগিয়ার কি? কত প্রকার? এর উপাদানগুলো কি?
এসি ট্রান্সমিশনের অসুবিধা (Disadvantage of AC Transmission Bangla)
নিচে ৬টি এসি ট্রান্সমিশনের অসুবিধা তুলে ধরা হল।
(ক) ওভারহেড লাইনের করোনা লস (Corona loss) কমানোর জন্য পরিবাহীসমূহের মধ্যবর্তী ইনসুলেশন পর্যাপ্ত রাখার নিমিত্তে পরিবাহীর মধ্যবর্তী দূরত্ব যথেষ্ট রাখতে হয়।
(খ) এসি ট্রান্সমিশনে ডিসির তুলনায় তামার (Copper) পরিমাণ বেশি লাগে।
(গ) ট্রান্সমিশন লাইনের দৈর্ঘ্য বেশি হলে ক্যাপাসিট্যান্সও বেশি হয়। লাইন ওপেন থাকলেও চার্জিং কারেন্টের জন্য অব্যাহতভাবে অপচয় ঘটে।
(ঘ) এসি সিস্টেমে ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি, ডিসির মতো তত সহজ নয়।
(ঙ) দুই অল্টারনেটরের প্যারালাল অপারেশনের জন্য সিনক্রোনাইজেশনের প্রয়োজন হয়।
(চ) অল্টারনেটরের গতির নিয়ন্ত্রণ খুব কম রেঞ্জের মধ্যে সীমিত রাখতে হয়।
বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থা (Distribution system) অবশ্য ডিসি অপেক্ষা এসিতেই ভালো। কারণ, এসি-তে ট্রান্সফর্মার ব্যবহার করে খুব সহজেই ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সর্বাপেক্ষা ভালো পদ্ধতি হলো উৎপাদন ও বিতরণের জন্য এসি ব্যবস্থা এবং ট্রান্সমিশনের জন্য ডিসি সিস্টেম ব্যবহার করা মার্কারি আর্ক রেকটিফায়ার ও থাইরিস্টর ব্যবহার করে বর্তমানে ডিসিতে বৈদ্যুতিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন সম্ভব হচ্ছে। মার্কারি আর্ক রেকটিফায়ার ও থাইরিস্টর ব্যবহার করে বর্তমানে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ও কম খরচে ডিসিকে এসি ও এসিকে ডিসিতে রূপান্তর করা যায়। এ ধরনের যন্ত্রের ক্ষমতা 400kV-তে 33 MW পাওয়ার পর্যন্ত হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
- এসি ট্রান্সমিশনের সীমাবদ্ধতা