এসি ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা (Limitations of AC transmission) : ডিসি ট্রান্সমিশনের তুলনায় এসি ট্রান্সমিশনে সুবিধা অনেক কিন্তু এসি ট্রান্সমিশনেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, আজ আমরা এসি ট্রান্সমিশনের ৪টি সীমাবদ্ধতা দেখব। যা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১। করোনা এবং রেডিও ইন্টারফারেন্স
আমরা জানি, করোনা শুধু পাওয়ার লস করে। শুধু তাই নয় এটি মাঝে মাঝে রেডিও-টেলিভিশনেও অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ ও সংকেতের সৃষ্টি করে। ইলেকট্রিক হাই-ভোল্টেজ এসি ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে এ সমস্যা খুব বেশি দেখা যায়। কন্ডাক্টরগুলোতে যখন 2-3 কিলোভোল্ট/মিমি ক্রস করে তখন কন্ডাক্টরগুলোর মধ্যে ভোল্টেজ বৃদ্ধির ফলে বাতাসের অক্সিজেন আয়োনাইজড হয়ে ওজোনে () পরিণত হয় এবং কন্ডাক্টরের চারদিকে জিম জিম শব্দ সহকারে যে হালকা অনুজ্জ্বল বেগুনি রশ্মি দেখা যায় আবার অনেক সময় দেখা যায় না সেটাই করোনা।
কন্ডাক্টরে যদি প্রায় 1.5 কিলোভোল্ট/মিলিমিটার-এ রাখা যায় তবে রেডিও ও টেলিভিশনের উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দ এবং করোনা কম রাখা সম্ভব। আর এজন্য কন্ডাক্টরের সাইজ অর্থাৎ ব্যাস বাড়ানো প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
ওভারহেড ট্রান্সমিশন লাইনে এজন্য বৃহৎ প্রস্থচ্ছেদবিশিষ্ট এসিএসআর (ACSR) কন্ডাক্টর ব্যবহার করতে হয় এবং এটার ম্যানুফ্যাকচারিং খরচ বেশি পড়ে ও এটা নাড়াচাড়া করানোও কষ্ট হয়ে পড়ে। তাই এসি ট্রান্সমিশনে উচ্চ ভোল্টেজ প্রেরণ অনেক সময় সম্ভব হয় না। যা এসি ট্রান্সমিশনের সীমাবদ্ধতার আওয়াতাভুক্ত।
২। উচ্চ সাপোর্টিং স্ট্রাকচার-এর ক্ষেত্রে সমস্যা
যেহেতু এসি ট্রান্সমিশন-এর ক্ষেত্রে পরিবাহীর আকার মোটা বা বান্ডেলজাতীয় হয়, তাই এর ওজন ডিসি লাইনের তুলনায় অনেক বেশি হয় বিধায় এই কন্ডাক্টর ঝুলানোর জন্য টাওয়ারের মেকানিক্যাল ডিজাইনটি বৃহৎ আকারের করতে হয়। কেননা অতিরিক্ত বাতাস ও চাপের কারণে টাওয়ার ভেঙে পড়ে যেতে পারে। এই লাইন স্থাপনের জন্য উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন লোকবল প্রয়োজন হয় এবং বৃহৎ ধরনের এই টাওয়ারের মালামাল স্থানান্তরের জন্য আর্থিক খরচও বেশি হয়।
৩। কারেন্ট পরিবহন ক্ষমতা
এসিতে ভোল্টেজ বৃদ্ধি পেলে চার্জিং কারেন্ট বৃদ্ধি পায় আর তাই ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে উচ্চ ভোল্টেজ বহনকৃত একাধিক পরিবাহীকে পাশাপাশি টানা সম্ভবপর হয় না। যা এসি ট্রান্সমিশনের সীমাবদ্ধতার প্রধান অংশ।
৪। ফেরান্টি ইফেক্ট
মধ্যম বা দীর্ঘ এসি ট্রান্সমিশন লাইনে ওপেন সার্কিট বা লোডবিহীন অবস্থায় বা সামান্য লোডযুক্ত অবস্থায় চলার সময় দেখা যায় যে, প্রেরণ প্রান্তের ভোল্টেজ অপেক্ষা গ্রহণ প্রান্তের ভোল্টেজ বেশি থাকে। সরবরাহ লাইনে এরূপ ঘটনাকে ফেরান্টি ইফেক্ট বলা হয়।
১৬০ কিমি দীর্ঘ লাইনের জন্য ১.৫ পারসেন্ট, ৫০০ কিমি দীর্ঘ লাইনের জন্য ১৩ পারসেন্ট এবং ৯৬০ কিমি দীর্ঘ লাইনের জন্য প্রায় ১০০ পারসেন্ট বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। মাঝে মাঝে এই অবস্থা হঠাৎ করে দেখা যায়, যা লাইনের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
সুতরাং দীর্ঘ ও মধ্যম বিদ্যুৎ পরিবহন ব্যবস্থায় লোড শূন্য বা কম লোড-এর ক্ষেত্রে গ্রহণ প্রান্তের ভোল্টেজ (Vr), প্রেরণ প্রান্তের ভোল্টেজ (Vs) অপেক্ষা বেশি হয়ে থাকে। যা এসি ট্রান্সমিশনের সীমাবদ্ধতার একটি বিবেচনাধীন কারণ।
আরও পড়ুন: