ভি-কার্ভঃ অঙ্কন, কার্যপ্রণালি, বিভিন্ন পয়েন্ট ও অবস্থান ব্যাখ্যা


ভি-কার্ভ কি?

সিনক্রোনাস মোটরের ইনপুট পাওয়ার সমান রেখে বা ধ্রুব মানের যান্ত্রিক আউটপুট পাওয়ার সমান রেখে ফিল্ড কারেন্টের (I) সাপেক্ষে আর্মেচার বা লাইন কারেন্ট (L)-এর পরিবর্তন পর্যায়ক্রমে একটি কাগজে গ্রাফ আকারে প্রকাশ করার পদ্ধতিকে ভি-কার্ভস বলে। 

যদি, V = ফেজ ভোল্টেজ,

I = ফেজ কারেন্ট,

Cosθ = পাওয়ার ফ্যাক্টর হয়।

তাহলে একটি তিন ফেজ মোটরের ইনপুট পাওয়ার, P= 3VI Cosθ ওয়াট। P এবং V যদি অপরিবর্তিত থাকে, তবে এর পরিবর্তনের সাথে Cosθ এরও পরিবর্তন হবে।

অতএব দেখা যায় যে, ফিল্ডের কারেন্ট পরিবর্তন করলে কেবলমাত্র আর্মেচার কারেন্টেরই পরিবর্তন হয় না, সে সঙ্গে পাওয়ার ফ্যাক্টরেরও পরিবর্তন হয়।

ভি-কার্ভ অঙ্কন

ভি-কার্ভ অঙ্কন করতে গেলে যে সকল যন্ত্রপাতি, মালামাল ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। সেগুলো হলঃ

১। ডিসি সাপ্লাই (DC supply)

২। রিওস্ট্যাট (Rheostat)

৩। ডিসি অ্যামিটার

৪। সিঙ্গেল ফেজ ওয়াটমিটার (Single phase watt meter) (২টি)

৫। ভোল্টমিটার (Voltmeter) (AC)

৬। অ্যামিটার (Ammeter) (AC)

৭। ফিল্ড সার্কিট সুইট (Field circuit suit)

৮। মোটরের লোডিং-এর জন্য জেনারেটর যা প্রয়োজনবোধে কাপলিং-এর ব্যবস্থা থাকে। এ জেনারেটরের আউটপুট মাপা হয় এবং বিভিন্ন লোডে মোটরের ইনপুট পরিমাণ করা হয়।

ভি-কার্ভ এর কার্যপ্রণালি

প্রথমে সিনক্রোনাস মোটরকে নো লোডে চালু করা হয়। শুরুতে এটি ইন্ডাকশন মোটর হিসবে ড্যাম্পার ওয়াইন্ডিং (রোটর পোলে সংযুক্ত থাকে) এর সাহায্যে চলে। কিছুক্ষণ পর সুইচ-এর মাধ্যমে ডিসি এক্সাইটেশন দেয়া হয়। এ সময় ডিসি অ্যামিটার পাঠ লক্ষ করা হয়। যদি কারেন্টের মান বেশি হয়, তবে বুঝতে হবে সঠিক সিনক্রোনিজমের অভাব হয়েছে, তখন সুইচ অফ করে পুনরায় ভিসি এক্সাইটেশন দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না পোল স্লিপ অনুযায়ী সঠিক সিনক্রোনাইজিং এ আসে। এ অবস্থায় এক্সাইটেশন কারেন্ট কম ও স্টেডি (Steady) মানে আসে।

এবার নো-লোড অবস্থায় এক্সাইটেশন কারেন্টের সাপেক্ষে আর্মেচার কারেন্ট গ্রাফ কাগজে লিপিবদ্ধ করতে হয়। এ একই প্রক্রিয়া ধ্রুব লোডের সাপেক্ষে ফুল-লোড, হাফ লোডে, 13th লোডে এবং 14th লোডে করা হয়। এটি কনস্ট্যান্ট আউটপুট অথবা কনস্ট্যান্ট ইনপুটের সাপেক্ষেও হতে পারে। এখন গ্রাফ কাগজে যা পাওয়া যায় তা দেখতে V কার্ভের মত এবং একেই ভি-কার্ভ বলে। ওয়াটমিটার, পাঠ গ্রহণ করে কার্যের বিভিন্ন অবস্থার পাওয়ার ফ্যাক্টর নির্ণয় করা হয়।

পাঠ গ্রহণঃ যে সকল পাঠ নেয়া হয় সেগুলো হল- W1, W2, A, A (dc), V আর্মেচার কারেন্টের পাঠ বিভিন্ন লোডে এক্সাইটেশন পরিবর্তন করে নেওয়া হয়।

হিসাব এবং কার্ভ গ্রাফ কাগজে অঙ্কনঃ গ্রাফ কাগজে আর্মেচার কারেন্ট/ফিল্ড এক্সাইটেশন কারেন্ট (/) প্লট করা হয়। এ প্রক্রিয়া নো-লোডে,14th লোডে, 12 লোডে, 34th লোডে এবং ফুল-লোডে করা হয়। গ্রাফ কাগজে এক্সাইটেশন


কারেন্টের সাপেক্ষে পাওয়ার ফ্যাক্টর প্লট (Plot) করা হয়। ভি-কার্ভ এবং পাওয়ার ফ্যাক্টর কার্ভের নমুনা চিত্র নিম্নে দেয়া হল :


পাওয়ার ফ্যাক্টর পরিমাপের সময় ওয়াটমিটার পাঠদ্বয় যোগ করা হয়, যথাঃ

=3

ভি-কার্ভের ব্যাখ্যা ( Explain V-curves)

ভি-রেখা হতে দেখা যায় যে, ফিল্ডের কারেন্ট যখন খুব কম, তখন মোটরের পাওয়ার ফ্যাক্টর ল্যাগিং আর খুব নিচু মানের হয়। এছাড়া এ সময় আর্মেচার কারেন্টও অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। ফিল্ডের কারেন্ট ধীরে ধীরে যত বাড়তে থাকে সে সঙ্গে পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান ততই উন্নত হয়, আর আর্মেচার কারেন্ট ততই কমতে থাকে। 

একটি নির্দিষ্ট মানের ফিল্ড কারেন্টে পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান সর্বোচ্চ বা একক হয়। এ সময় আর্মেচার লাইন হতে সবচেয়ে কম কারেন্ট গ্রহণ করে। এরপর ফিল্ডের কারেন্ট আরও বৃদ্ধি করলে পাওয়ার ফ্যাক্টর লীডিং হয় কিন্তু মান একক হতে কমে যায়। ফলে আর্মেচার কারেন্ট আবার বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

এখানে হালকা, সাধারণ এবং বেশি লোডের ভি-কার্ভ দেখানো হয়েছে। প্রতিটি কার্ভ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, কম ফিল্ড এক্সাইটেশনে লাইন কারেন্ট (আর্মেচার কারেন্ট) বেশি আবার রেটেড এক্সাইটেশনে মোটরের লাইন করেন্ট সবচেয়ে কম এবং বেশি ফিল্ড এক্সাইটেশনে লাইন কারেন্ট আবারও বেশি হয়। কাজেই বলা যায়, স্বাভাবিক এর এক্সাইটেশনে পাওয়ার ফ্যাক্টর একক এবং আর্মেচার কারেন্ট সবচেয়ে কম। 

বেশি বা ওভার এক্সাইটেশনে পাওয়ার ফ্যাক্টর লীডিং এবং বেশি অর্মেচার কারেন্ট প্রবাহিত হয়। কম বা আন্ডার এক্সাইটেশনে পাওয়ার ফ্যাক্টর ল্যাগিং এবং আর্মেচার কারেন্ট বেশি হয়। 

কাজেই কোন নিক্রোনাস মোটরের যদি একটি নির্দিষ্ট পাওয়ারের ভি-রেখা দেওয়া থাকে, তাহলে ভি-কার্ভ হতে এই মোটরের পাওয়ার ফ্যাক্টর, লাইন কারেন্ট এবং ফিল্ড কারেন্ট কত, তা জানা যায়।

পাওয়ার ফ্যাক্টরের মাধ্যমে ভি-কার্ভের বিভিন্ন পয়েন্ট এবং অবস্থান

ধরা যাক, নো-লোডে আন্ডার এক্সাইটেশনের পরিমাণ গুণ কম হলে সিনক্রোনাস মোটরের আর্মেচার কারেন্টের পরিমাণ খুব বেশি থাকে। অর্থাৎ, ফিল্ড কারেন্ট ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করলে এর আর্মেচার কারেন্ট কমতে থাকে এবং নরমাল এক্সাইটেশনে এটি সর্বনিম্ন হয়। পাওয়ার ফ্যাক্টর বৃদ্ধি পেতে পেতে নরমাল এক্সাইটেশনে ইউনিটি (1) হয়।


এখন এক্সইটেশনের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করতে থাকলে। অর্থাৎ ওভার এক্সাইটেশন যত বৃদ্ধি পেতে থাকে, মোটরের আর্মেচার কারেন্ট তত বাড়তে থাকে এবং পাওয়ার ফ্যাক্টর ইউনিটি থেকে কমতে থাকে তবে লিডিং হয়। উপত্রের চিত্রে ভি-কার্ভগুলোর সর্বনিম্ন কার্ভটিই নো-লোড সিনক্রোনাস মোটরের ভি-কার্ভ। 

অনুরুপভাবে, অর্থলোড এবং পূর্ণ লোডে সিংক্রোনাস মোটরের ফিল্ড কারেন্ট পরিবর্তন করে V-কার্ভ অঙ্কন করা হলো। এই কর্ভে আন্ডার এক্সাইটেশন থেকে সিনক্রোনাস মোটরের ফিল্ড কারেন্ট ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করতে থাকলে এর পাওয়ার ফ্যাক্টর ল্যাগিং থেকে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং নামাল এক্সাইটেশনে এটা ইউনিটি হয়। নরমাল এক্সাইটেশনের পর আরও এক্সাইটেশন বৃদ্ধি করতে থাকলে মোটরের পাওয়ার ফ্যাক্টর ইউনিটি থেকে লিডিং হয়, কিন্তু হ্রাস পেতে থাকে যা চিত্রে দেখানো হলো।

আরও পড়ুন:


প্রায়সই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন

সিনক্রানাস মোটর কি?

লোড পরিবর্তনের সাথে যে মোটরের গতিবেগের কোনো পরিবর্তন হয় না, অর্থাৎ যে মোটর সর্বদা একটি নিদির্ষ্ট গতিবেগে ঘুরে, তাকে সিনক্রোনাস মোটর বলে।

সিনক্রানাস স্পিড কি?

স্টেটর ফিল্ডের রিভলভিং ফ্লাক্স -এর গতিবেগকে সিনক্রানাস স্পিড বলে।

কি পরিবর্তনের কারণে সিনক্রানাস মোটরের গতিবেগ পরিবর্তন হয়?

সিনক্রানাস মোটরের গতিবেগ পোলের সংখ্যা বা সাপ্লাই ফ্রিকুয়েন্সির সংখ্যার পরিবর্নের সাথে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। 

সিনক্রানাস মোটরের গতিবেগের অভিমুখ কীভাবে পরিবর্তন হয়?

থ্রি-ফেজ সাপ্লাইয়ের যে কোন দুটি ফেজের স্থান পরিবর্তন করে এর ঘুর্ণনের দিক পরিবর্তন করা যায়।

টর্ক অ্যাঙ্গেল কাকে বলে?

সিনক্রানাস মোটরের রোটর অ্যাক্সিস, স্টেটর অ্যাক্সিস থেকে যতটা কোণে পিছনে থাকে, তাকে টর্ক অ্যাঙ্গেল বলে।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Smartwatch

Random Products