গতলেখাতে আমরা আলোচনা করেছি, অল্টারনেটর কি? এবং এবং কিভাবে কাজ করে? আজ আমরা দেখব, অল্টারনেটরের এক্সাইটেশন পদ্ধতি সম্পর্কে।
অল্টারনেটরের ফিল্ডে স্থির চুম্বক ক্ষেত্র তৈরির জন্য যে ডিসি ভোল্টেজ সরবরাহ দেয়া হয়, তাকে অল্টারনেটরের এক্সাইটেশন বলে। বিভিন্ন ধরনের অল্টারনেটরে বিভিন্ন মানের ভোল্টেজ এক্সাইটেশন দেয়া হয়।
যেহেতু পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান লোডের উপর নির্ভর করে, আবার সরবরাহকারীর পক্ষে এই পাওয়ার ফ্যাক্টরের মান জানা সম্ভব নয় বিধায় অল্টারনেটরের রেটিং KVA তে লিখা হয়।
অল্টারনেটরের ফিল্ড এক্সাইটেশনের জন্য দুটো পদ্ধতি রয়েছে। যথাঃ
(i) ব্রাশযুক্ত এক্সাইটেশন পদ্ধতি ও
(ii) ব্রাশবিহীন এক্সাইটেশন পদ্ধতি।
(i) ব্রাশযুক্ত এক্সাইটেশন পদ্ধতি (Brush connected excitation system):
প্রতিটি অল্টারনেটরের ফিল্ডকে উত্তেজিত করতে পৃথক ডিসি সাপ্লাই-এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। সাপ্লাইকৃত ডিসি ভোল্টেজ সাধারণত 125Volt হতে 250Volt পর্যন্ত হতে পারে। যে উৎস বা Source হতে ডিসি সাপ্লাই দেয়া হয় তাকে এক্সাইটার বলে। এ এক্সাইটার সাধারণত ডিসি শান্ট জেনারেটর হয়ে থাকে ।
পাওয়ার হাউজে এ শান্ট জেনারেটরকে মোটর বা ছোট ডিজেল ইঞ্জিন দ্বারা চালু রাখা হয়। মূল এক্সাইটার এর দুটো টারমিনালকে অল্টারনেটর ফিল্ডের সঙ্গে দুটো স্লিপ রিং ও ব্রাশের মাধ্যমে সংযোগ করা হয়। ছোট ছোট অল্টারনেটরের এক্সাইটার স্বয়ং উত্তেজিত (Self-excited) এবং বড় বড় অল্টারনেটরের এক্সাইটার পৃথক উত্তেজিত (Separately excited) ধরনের হয়।
বড় বড় অল্টারনেটরের মূল এক্সাইটারের ফিল্ডকে উত্তেজিত করতে যে এক্সাইটার লাগে তাকে পাইলট এক্সাইটার (Pilot exciter) বলে। পাইলট এক্সাইটার একটি স্বয়ং উত্তেজিত ডিসি শান্ট জেনারেটর এবং মূল এক্সাইটারের শ্যাফটের সাথে সংযুক্ত থাকে।
ব্রাশযুক্ত দুটো এক্সাইটারের অল্টারনেটরসহ সংযোগ চিত্র নিচে দেখান হয়েছে। এছাড়াও অনেক সময় অল্টারনেটরের শ্যাফটের সাথে পুলি ও বেল্ট ব্যবহার করেও এ এক্সাইটার পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
(ii) ব্রাশবিহীন এক্সাইটেশন পদ্ধতি (Brushless excitation system):
এ পদ্ধতি ছোট ও মাঝারি সাইজের অল্টারনেটরের রোটর ফিল্ডকে স্বয়ং উত্তেজনার জন্য ব্যবহৃত হয়। এতে বাহির থেকে কোন ডিসি ভোল্টেজ সাপ্লাই দেয়া হয় না। তিন ফেজ অল্টারনেটরের ন্যায় এক্ষেত্রে একই পদ্ধতিতে রোটরে সৃষ্ট e.m.f দ্বারা এক্সাইটেশনের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
ব্রাশবিহীন এক্সাইটেশন পদ্ধতিতে রেকটিফায়ারসহ সংযোগ করে দেয়ার- ফলে ওয়াইন্ডিং-এর মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে কারেন্ট প্রবাহ হয়ে তড়িৎ চুম্বক সৃষ্টি করে, যার দ্বারা ফিল্ড এক্সাইটেশনের কাজ সম্পাদিত হয়। ফলে এ পদ্ধতিতে স্লিপ রিং ও ব্রাশের প্রয়োজন হয় না। ব্রাশবিহীন এক্সাইটারের সংযোগ চিত্র নিচে দেখান হয়েছে।
এক্সাইটরের কাজ (Function of excitor)
এক্সাইটরের কাজ তিনটি, যথা :
১। রোটর ফিল্ডকে উত্তেজিত করা,
২। টার্মিনাল ভেল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করা ও
৩। রিয়্যাকটিভ পাওয়ার ফ্যাক্টর নিয়ন্ত্রণ করা।
অল্টারনেটরের রেটিং (Rating of Alternator)
যদি অল্টারনেটরটি রেটেড ভোল্টেজ-এ রেটেড কারেন্ট সাপ্লাই দেয় তবে এর পাওয়ার (P), পাওয়ার ফ্যাক্টরের (P.f.) মান অনুসারে কম-বেশি হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি 20KVA এর সিঙ্গেল ফেজ অল্টারনেটরের রেটেড কারেন্ট 100 Amp. এবং রেটেড ভোল্টেজ 200 Valt.
সুতরাং একক পাওয়ার ফ্যাক্টরে (Unity power factor) অলটারনেটরের কিলোওয়াট হবে
= VIcosθ = =20kW
কিন্তু যদি পাওয়ার ফ্যাক্টররের মান কমিয়ে 0.8 হয় তবে অলটারনেটরের আউটপুট হবে
= =16kV
কিন্তু উভয়ক্ষেত্রে অল্টারনেটরের আপাত শক্তি হবে VI =
=20kV. অর্থাৎ 20KVA অপরিবর্তিত থাকবে।যদি 0.8 Pf. এ 20kW এর পরিবর্তে 16kW Load সরবরাহ করতে হয় তবে অলটারনেটরের 125 Amp বেশি সরবরাহ দিতে হবে। এক্ষেত্রে অল্টারনেটরকে রেটেড পাওয়ার সাপ্লাই দিতে রেটেড কারেন্ট থেকে 25 Amp বেশি সরবরাহ দিতে হবে যা অল্টারনেটরের পক্ষে ক্ষতিকর। এমনকি ট্রান্সমিশন লাইনের পক্ষে ক্ষতিকর।
কাজেই অলটারনেটরের নেম প্লেটে kW থাকলে এর রেটেড কারেন্ট সম্বন্ধে জানা যায় না; যদি এর পাওয়ার ফ্যাক্টর জানা না থাকে।
P.f. যাই হোক না কেন রেটেড KVA সকল সময় একই থাকে। সুতরাং অল্টারনেটর KW রেটিং-এর পরিবর্তে KVA রেটিং করাই যুক্তিযুক্ত।