জেনারেটর, মোটর, অল্টারনেটর, ট্রান্সফরমার এর নাম শুনে নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। অল্টারনেটর আর জেনারেটর হলো আপন ভাইয়ের মতো। দুই ভাই হলেও তাদের ভিতর কিছু পার্থক্য আছে। অল্টারনেটর/এসি জেনারেটর আর ডিসি জেনারেটর, বেসিক প্রিন্সিপাল প্রায় একই। কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। এই আর্টিকেলে সবগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
অল্টারনেটর কি? (What is Alternator)
যে যন্ত্রের মাধ্যমে যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে পরিণত বা রূপান্তর করা যায়, তাতে অল্টারনেটর বলে।
সাধারণত একটি অল্টারনেটরে উৎপন্ন ভোল্টেজ পরিবর্তনশীল বা অল্টারনেটিং হয়। তবে ডিসি জেনারেটরের বেলায় উৎপন্ন এসি -কে কমুটেটরের মাধ্যমে ডিসিতে রূপান্তর করে লোডে সরবরাহ করা হয় এবং অল্টারনেটরে স্লিপ রিং এর মাধ্যমে লোডে বৈদ্যুতিক পাওয়ার সরবরাহ করা হয়।
অল্টারনেটরের অন্যতম প্রধান দুটি অংশ হল আর্মেচার এবং চুম্বক ক্ষেত্র। ফ্যারাডের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন নীতি অনুযায়ী যখন কোন পরিবাহী চুম্বক বলরেখাকে কর্তন করে, তখন তাতে ই.এম.এফ উৎপন্ন হয়। ছোট ছোট অল্টারনেটর এবং ডিসি জেনারেটরে চুম্বক ক্ষেত্রকে স্থির রেখে পরিবাহী বা আর্মেচারকে ঘুরানো হয়, তবে বড় বড় অল্টারনেটরে আর্মেচারকে স্থির রেখে ফিল্ডকে ঘুরানো হয়। ফলে আর্মেচার কন্ডাক্টর ফিল্ড ফ্লাক্সকে কর্তন করে এবং এসি ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়।
অল্টারনেটরের ঘুরন্ত ফিল্ডকে রোটর এবং স্থির আর্মেচারকে স্টেটর বলে।
অল্টারনেটরের কার্যপ্রণালী (Principle of an Alternator):
ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্ডাকশনের (dilectromagnetic induction) মূলতত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই অল্টানেটর বা এসি জেনারেটর তৈরি করা হয়। ডিসি জেনারেটরের মত অল্টারনেটরেও আর্মেচার এবং ফিল্ড থাকে। বড় বড় অল্টারনেটরে ফিল্ড ঘোরে এবং আর্মেচার স্থির থাকে।
অল্টারনেটরের আর্মেচারের ওয়াইন্ডিং একটি স্থির কাঠামোর খাজের ভিতর বসান থাকে। একে স্টেটর বলে আর মেশিনের ফিল্ড কয়েল একটি ঘুরন্ত কাঠামোর উপর বসান থাকে। একে রোটর বলে নিচের চিত্রে স্টেটর এবং রোটরের অবস্থান দেখান হল।
একটি ঢালাই লোহার ফ্রেমের সাথে আর্মেচার বা স্টেটরের কোর আটকানো থাকে। কোরের ভিতরের দিকে (Inner periphery) যে সব খাঁজ কাটা থাকে, তার মধ্যেই আর্মেচারের ওয়াইন্ডিং বসান হয়। রোটর অনেকটা ফ্লাইহুইলের (Flywheel) মত দেখায়। এর বাইরের দিকে (Outer rim) পর্যায়ক্রমে নর্থ (North) ও সাউথ (South) পোলগুলো বসান থাকে। পোলের গায়ে জড়ানো কয়েল দিয়ে ডিসি সাপ্লাই থেকে 125 কিংবা 250 ভোল্টে কারেন্ট প্রবাহ হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডিসি সাপ্লাই-এর জন্য রোটরের শ্যাফটের সঙ্গে একটি ছোট শান্ট জেনারেটর ব্যবহার করতে দেখা যায়। একে এক্সাইটার বলে। এক্সাইটার থেকে কারেন্ট ব্রাশ ও স্লিপ রিং হয়ে ফিল্ড কয়েলে যায়। যেহেতু এ কারেন্টের পরিমাণ কম ও নিম্ন ভোল্টেজে তা সরবরাহ করা হয় সেহেতু অপেক্ষাকৃত পাতলা ব্রাশ ও স্লিপ-রিং ব্যবহার করলেই কাজ চালানো যায়।
রোটর ঘুরতে আরম্ভ করলে সে সঙ্গে চুম্বক বলরেখাও ঘুরতে থাকে। ঘুরন্ত চুম্বক বলরেখা যখন স্টেটরের খাজে বসান পরিবাহীগুলোকে ছেদ করে, তখন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ইন্ডাকশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি পরিবাহীতে ইএমএফ (emf) আবিষ্ট হয়। আবিষ্ট ইএমএফ এর অভিমুখ ফ্লেমিং-এর দক্ষিণ হস্ত নিয়ম ( Fleming right hand rule) থেকে জানা যায়।
এ নিয়ম প্রয়োগ করলে দেখা যায় কোন পরিবাহীর সামনে যখন নর্থ পোল এসে দাঁড়ায়, তখন আবিই ইএমএফ এবং কারেন্ট যে অভিমুখে কাজ করে, সাউথ পোল এসে দাঁড়ালে কাজ করে ঠিক তার বিপ্রীত অভিমুখে। ফলে আর্মেচারে আবিষ্ট ই.এম.এফ. এবং সে সঙ্গে কারেন্ট অল্টারনেটিং হয়।
অল্টারনেটর এবং ডিসি জেনারেটরের মধ্যে পার্থক্য (Different between alternator and DC generator)
অল্টারনেটর | ডিসি জেনারেটর | |
---|---|---|
১। এতে এসি-ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় এবং স্লিপ রিং এর মাধ্যমে লোডে সরবরাহ করা হয়। | ১। এতে প্রাথমিক অবস্থায় এসি ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় কিন্তু পরে কমুটেটরের মাধ্যমে ডিসি তৈরি করে লোডে সরবরাহ করা হয়। | |
২। অল্টারনেটরে স্লিপ রিং থাকে। | ২। ডিসি জেনারেটরে কমুটেটর থাকে। | |
৩। এতে ফিল্ড বা আর্মেচার উভয়ই স্থির বা ঘুরন্ত থাকতে পারে। | ৩। এতে ফিল্ড স্থির এবং আর্মেচার ঘুরে। | |
৪। আর্মেচার ওয়াইন্ডিং খোলা (Open) থাকে। | ৪। আর্মেচার ওয়াইন্ডিং বন্ধ (Close) থাকে। | |
৫। ফিল্ডে এক্সাইটারের দ্বারা ডিসি সাপ্লাই দিতে হয়। | ৫। আলাদা ডিসি সাপ্লাই দরকার নেই। | |
৬। ফিল্ড কোর লেমিনেটেড শিট দ্বারা তৈরি। | ৬। ফিল্ড কোর ঢালাই লোহার তৈরি। | |
৭। হারমোনিক্সের প্রভাবে উৎপন্ন ভোল্টেজে বিকৃতি ঘটে থাকে। | ৭। হারমোনিক্সের প্রভাবমুক্ত। | |
৮। এডি কারেন্ট লস অনেক বেশি। | ৮ এডি কারেন্ট লস কম। | |
৯। এতে 33.2KV পর্যন্ত ভোল্টেজ উৎপন্ন করা যায়। | ৯। এতে সর্বোচ্চ 1.5KV পর্যন্ত ভোল্টেজ উৎপন্ন করা যায়। |