ট্রান্সফর্মারের শর্ট সার্কিট টেস্ট কাকে বলে? কেন করা হয়? কি কি তথ্য পাওয়া যায়? সতর্কতাসমূহ কি?
বৈদ্যুতিক শক্তিকে গ্রাহকের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে তোলা ও তাদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়া বৈদ্যুতিক সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর এই অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে ট্রান্সফর্মার বা বিদ্যুৎ স্থানান্তর যন্ত্র। তাই ট্রান্সফর্মারের শর্ট সার্কিট টেস্ট (Short circuit test or impedance test) খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।
ট্রান্সফর্মারের শর্ট সার্কিট টেস্ট কাকে বলে?(Short Circuit Test or Impedance Test of Transformer)
ট্রান্সফরমারের একদিকে (সাধারণত লো-সাইড) শর্ট করে অন্য সাইডে ভেরিয়্যাকের সাহায্যে রেটেড ভোল্টেজের খুব কম ভোল্টেজ (রেটেড ভোল্টেজের 5% থেকে 10%) সাপ্লাই দিয়ে যে টেস্ট করা হয়, তাকে শর্ট সার্কিট টেস্ট (Short circuit test) বলে। একে ইম্পিড্যান্স টেস্ট (Impedance test) ও বলা হয়।
এক্ষেত্রে লো-ভোল্টেজ সাইড মোটা কপার তার বা অ্যামিটার দ্বারা শর্ট করে রাখা হয়। হাই-ভোল্টেজ সাইডে ওয়াটমিটার, অ্যামিটার, ভোল্টমিটার যথারীতি সংযোজন করে একটি ভেরিয়্যাক বা ভোল্টেজ রেগুলেটরের সাহায্যে খুব ধীরে ধীরে শূন্যমান হতে ভোল্টেজ বৃদ্ধি করা হয়। ট্রান্সফরমারের জানা রেটেড কারেন্ট অ্যামিটারে প্রবাহিত হলে আর ভোল্টেজ বৃদ্ধি করা হয় না। ঐ অবস্থায় ওয়াটমিটার রিডিং সম্পূর্ণটাই কপার লস হিসাবে ধরা হয়। যদিও এর মধ্যে সামান্য কিছু পরিমাণ কোর লস, স্ট্রে লস থাকে, তবুও তা উপেক্ষা করা হয়।

চিত্রঃ শর্টসার্কিট টেস্ট বা ইস্পিড্যান্স টেস্ট এর সার্কিট ডায়াগ্রাম
শর্টসার্কিট টেস্ট কেন করা হয়? এর উদ্দেশ্য কি?
মূলত নিম্নলিখিত কারণে শর্টসার্কিট টেস্ট করা হয়। ট্রান্সফরমারের যে সাইডে পরিমাপক যন্ত্রপাতি সংযুক্ত থাকবে সে সাইডের সাপেক্ষে তুলনা করে নির্ণয় করা যায়ঃ
১। সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স (R_e)
২। সমতুল্য রিয়্যাকট্যান্স (X_e)
৩। সমতুল্য ইম্পিড্যান্স (Z_e)
৪। রুপার লস (ফুল লোডে অথবা যে-কোনো লোডে)
৫। ইফিসিয়েন্সি এবং রেগুলেশন।
কেন শর্টসার্কিট টেস্টের সময় লো-সাইডে শর্ট করা হয়?
এ টেস্টের সময় ট্রান্সফরমারের যে-কোনো সাইড শর্ট করা যায়। তবে নিম্নলিখিত কারণে লো-সাইড শর্ট করা হয়-
১। লো-রেঞ্জের ইনস্ট্রুমেন্ট হাই সাইডে সংযোগ করার সুবিধা পাওয়া যায়, কারণ হাই সাইডে নিম্নমানের কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
২। লো-ভোল্টেজ সাইডে ফুল-লোড কারেন্টের তুলনায় হাই সাইডে ফুল-লোড কারেন্টের পরিমাণ কম থাকে।
৩। এ অবস্থায় আরোপিত ভোল্টেজ রেটেড ভোল্টেজের 5% সাপ্লাই দেয়া হয়।
৪। ওয়াটমিটার উভয় ওয়াইন্ডিং -এর কপার লস রেটেড আউটপুটের 3% এর নিচে পরিমাপ করে; সুতরাং হাই সাইডে পরিমাপ করা সুবিধাজনক।
কেন শর্ট সার্কিট টেস্টের সময় ওয়াটমিটার শুধু কপার লস নির্দেশ করে?
এ টেস্টের আরোপিত ভোল্টেজ রেটেড ভোল্টেডোর 5% থেকে 10% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। ফলে কোরে নরমাল মিউচুয়াল ফ্লাক্স এর চেয়ে অনেক কম মিউচুয়াল ফ্লাক্সের (Q_m) সৃষ্টি হয়। যেহেতু মোটামুটিভাবে কোর লস (Q_m)2 সেহেতু কোর লস বাস্তবক্ষেত্রে শূন্য হয়। এই কারনেই ওয়াটমিটার রিডিং এর সম্পূর্ণটাই কপার লস হিসাবে বিবেচিত হয়।
কেন শর্টশর্টসার্কিট টেস্টের সময় রিওস্ট্যাটের প্রয়োজন পড়ে?
শর্টসার্কিট টেস্টের সময় প্রাইমারি সাইডে (এক্ষেত্রে হাই-সাইড) রিওস্ট্যাট বা ভেরিয়্যাক সংযোগ করে ভোল্টেজ কমবেশি করে রেটেড কারেন্ট প্রবাহিত করানো হয়। প্রাইমারি সাইডে রেটেড কারেন্ট প্রবাহিত হলে স্বাভাবিকভাবে শর্টসার্কিট সেকেন্ডারিতেও তার রেটেড কারেন্ট প্রবাহিত হবে। এ ধরনের টেস্টে প্রবাহিত রেটেড কারেন্ট সবসময় সঠিক মানে রাখার জন্যই রিওস্ট্যাট বা ডেরিয়্যাকের প্রয়োজন হয়।
শর্ট সার্কিট টেস্ট করার সময় কি কি সাবধানতা মানতে হবে?
১। ট্রান্সফরমারের লো-সাইডের টার্মিনালদ্বয় মোটা রেজিস্ট্যান্সবিহীন কপার ওয়্যার দ্বারা অথবা একটি অ্যামিটার দ্বারা শর্ট করে নিতে হবে।
২। লো-রেঞ্জের মেজারিং ইনস্ট্রুমেন্ট, যেমন- অ্যামিটার, ভোল্টমিটার, ওয়াটমিটার প্রভৃতিকে যথাযথ হাই-সাইডে সংযোগ করতে হবে।
৩। ইনপুট সাইডে অর্থাৎ হাই-সাইডে একটি ভেরিয়েবল রিওস্ট্যাট বা ভেরিয়্যাক সংযোগ করে শূন্যমান হতে ধীরে ধীরে ভোল্টেজ বাড়াতে হবে যাতে ট্রান্সফরমারে রেটেড কারেন্ট প্রবাহিত হয়। এ প্রযুক্ত ভোল্টেজ রেটেড ভোল্টেজের 5% থেকে 10% এর মধ্যে হয়ে থাকে। আগে থেকেই ট্রান্সফরমারের রেটেড কারেন্ট হিসাব করে নিতে হবে এবং অ্যামিটারে তা দেখা যাবে।
৪। লো-রেঞ্জের ইনসট্রুমেন্ট ব্যবহার করতে হবে।
৫। টেস্ট চলাকালীন সময়ে বেশিক্ষণ ধরে টেস্ট করা উচিত নয় কারণ ট্রান্সফরমার শর্ট অবস্থায় তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায় এবং এটা ইনসুলেশনের পক্ষে ক্ষতিকর।
আরও পড়ুনঃ
- ট্রান্সফর্মারের ওপেন সার্কিট টেস্ট কাকে বলে? কি কি তথ্য পাওয়া যায়? সতর্কতাসমূহ কি?
- ট্রান্সফরমার সুরক্ষা ব্যবস্থা
- বুখলজ রিলে কি? কিভাবে কাজ করে? কোথায় ব্যবহার করা হয়?